প্রতিনিধি 12 September 2025 , 11:40:11 প্রিন্ট সংস্করণ
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ঘুষ নেওয়া ও নিজস্ব দালাল চক্রের সদস্যের ভিডিও ধারণের সময় সাংবাদিকদের ওপরে হামলা করে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এসময় সাংবাদিকদের অবরুদ্ধ করে মব সৃষ্টিরও চেষ্টা করা হয়।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এ ঘটনা ঘটে।
হামলার শিকার হওয়া ওই সাংবাদিকরা হলেন- নয়া দিগন্তের পটুয়াখালী প্রতিনিধি (ডিজিটাল) মাহমুদ হাসান (২৪) ও বিজয় টেলিভিশনের রাঙ্গাবালী প্রতিনিধি একেএম রাকিব হোসাইন (৩২)।
ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইলটি দৈনিক নয়া দিগন্তের পটুয়াখালী প্রতিনিধি (ডিজিটাল) মাহমুদ হাসানের। এ ঘটনায় রাতেই তিনি বাদী হয়ে রাঙ্গাবালী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়, নিজস্ব দালালের মাধ্যমে অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর হোল্ডিং অনুমোদন, নামজারি ও এমপি ১৪৪-১৪৫ মামলার প্রতিবেদনসহ অন্যান্য ভূমিসেবা নিতে প্রত্যাশীদের থেকে সরকারি ফি-এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ঘুষ নিচ্ছিলেন ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম। তার নিজস্ব দালাল চক্রের মাধ্যমে এসব দেনদরবার করতে হয়। রাতেই ঘুষের এসব লেনদেন বেশি হয় বলে ভুক্তভোগীরা সাংবাদিকদের জানান।
নয়া দিগন্তের প্রতিনিধি মাহমুদ হাসান বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে গেলে দেখি আল-আমীন নামে এক দালালের মাধ্যমে টাকা নিচ্ছেন ওই কর্মকর্তা। এসময় ভিডিও ধারণ করতে গেলে ক্ষুব্ধ হয়ে আমার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন। এর আগেও আমি এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তরমুজ চাষীদের থেকে চাঁদা নেওয়ার ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করেছি। সে সময়েও তিনি আমাকে মোটা অংকের টাকার মাধ্যমে প্রভাবিত করতে চেয়েছিলেন কিন্তু সফল হতে পারেননি। তার দুর্নীতিতে আমাকে সহায়ক হিসেবে পাচ্ছে না এ কারণেই তিনি আমার উপরে হয়তো বা ক্ষুব্ধ।
বিজয় টেলিভিশনের রাঙ্গাবালী প্রতিনিধি একেএম রাকিব হোসাইন বলেন, ‘ঘুষ গ্রহণের ভিডিও ধারণ ও দালালের বক্তব্য নেওয়ার সময় ভূমি কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম নয়া দিগন্তের প্রতিনিধি মাহমুদ হাসানের মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। একই সময়ে মব সৃষ্টির জন্য তার দালালদের ডেকে অফিসের মূল গেট তালাবদ্ধ করারও চেষ্টা করেন তিনি। পুরো বিষয়টি ভিডিও চিত্রে ধারণ করা হয়েছে।’
এদিকে ভূমি কর্মকর্তার গঠিত নিজস্ব দালাল চক্রের অন্যতম সদস্য আল-আমীনের ভিডিও মন্তব্য নেয়ার চেষ্টা করেও পাওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। অভিযোগ রয়েছে, ভূমি কর্মকর্তার অন্ততপক্ষে ৫-৮ জন সক্রিয় দালাল রয়েছে। এদের মাধ্যমে কোন ফাইল তার টেবিলে গেলে দ্রুত কাজ হয়। নয়তো সেবা প্রত্যাশীদের ঘুরতে হয় কর্মকর্তার অফিসের বারান্দায় বারান্দায়।
অভিযুক্ত ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, সরি ভাই, সরি। ভাই কালকে আমার মনটাও ভাল ছিল না। ভাই সরি। আমার ভুল হয়ে গেছে। মানুষ মাত্রই ভুল করে। আমি সরি। সব বিষয় নিয়েই দুঃখ প্রকাশ করতেছি।
রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শামীম হাওলাদার বলেন, নয়া দিগন্তের সাংবাদিক মাহমুদ হাসানের মোবাইল ছিনিয়ে নেয়া ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দেখব।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজীব দাশ পুরকায়স্থ বলেন, স্থানীয় সাংবাদিকরা আমাকে জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছি।
পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ উল আলম বলেন, জেলা প্রশাসক স্যারের বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।”