আজকের বিশ্ব

হামাসমুক্ত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে ভোট

  প্রতিনিধি 12 September 2025 , 9:16:47 প্রিন্ট সংস্করণ

ইসরায়েলি হুমকির মুখে গাজা নগরী থেকে দক্ষিণ দিকে পালিয়ে যাচ্ছে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা। গত মাস থেকে শহর এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল গাজা নগরীতে
ইসরায়েলি হুমকির মুখে গাজা নগরী থেকে দক্ষিণ দিকে পালিয়ে যাচ্ছে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা। গত মাস থেকে শহর এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল গাজা নগরীতেছবি: রয়টার্স

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অধিকাংশ সদস্যদেশ। এই প্রস্তাবকে ‘নিউইয়র্ক ঘোষণা’ বলা হচ্ছে। প্রস্তাবে ফিলিস্তিন–ইসরায়েল দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রচেষ্টায় তৎপরতা আনার কথা বলা হয়েছে। এ–ও বলা হয়েছে যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে, সেখানে হামাসের কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকবে না।

গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এ ভোটাভুটি হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে সাধারণ পরিষদের ১৪২টি দেশ। বিপক্ষে ভোট দিয়েছে মাত্র ১০টি দেশ। তাদের মধ্যে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে। ভোটদানে বিরত ছিল ১২টি দেশ। সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিল ফ্রান্স ও সৌদি আরব।

নিউইয়র্ক ঘোষণার প্রতি এরই মধ্যে সমর্থন দিয়েছে আরব লিগ। গত জুলাইয়ে আরব দেশসহ জাতিসংঘের ১৭টি সদস্যদেশ এতে সই করেছিল। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গাজা সংঘাত বন্ধ করতে হবে। এ জন্য হামাসকে অবশ্যই উপত্যকাটির শাসন থেকে সরে যেতে হবে। পাশাপাশি নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের (পিএ) কাছে সমর্পণ করতে হবে।

এই ভোটাভুটি এমন সময় অনুষ্ঠিত হলো যখন চলতি মাসের ২২ তারিখে রিয়াদ ও প্যারিসের সভাপতিত্বে সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বসতে যাচ্ছে। সেখানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বর্তমানে সাধারণ পরিষদের ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১৪৯টি দেশই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়।

গাজা নগরী ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে লিফলেট ফেলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তা তুলে ধরে দেখাচ্ছে ফিলিস্তিনি শিশুরা। গতকাল গাজা নগরীতে
গাজা নগরী ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে লিফলেট ফেলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তা তুলে ধরে দেখাচ্ছে ফিলিস্তিনি শিশুরা। গতকাল গাজা নগরীতেছবি: এএফপি

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি সাধারণ পরিষদের সমর্থনকে ‘লজ্জাজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওরেন মারমোর্সটেইন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, নিউইয়র্ক ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করছে ইসরায়েল। সাধারণ পরিষদ ‘বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন এক রাজনৈতিক সার্কাসে পরিণত হয়েছে’।

তবে এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হুসেইন আল–শেখ। এক্সে তিনি লিখেছেন, ‘জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান এবং একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের বিষয়ে যে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, সেটিকে আমি স্বাগত জানাই। এর মাধ্যমে আমাদের মানুষের অধিকারের সমর্থনে আন্তর্জাতিক আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে।’

এমন এক সময় প্রস্তাবটি গৃহীত হলো যখন গাজায় নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গত মাস থেকে সেখানকার সবচেয়ে বড় শহর এলাকা গাজা নগরী দখলের উদ্দেশ্যে তীব্র হামলা চালাচ্ছে তারা। এর জেরে সেখান থেকে লাখ লাখ মানুষ পালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হিসাবে, গত ২৩ মাসে গাজায় ৬৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।

‘কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র থাকবে না’

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি বাড়াতে চান ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এই পরিকল্পনা আনুষ্ঠানিকভাবে এগিয়ে নিতে একটি চুক্তিতে সই করেছেন তিনি। চুক্তি বাস্তবায়িত হলে দখলকৃত পশ্চিম তীর দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাবে। ফলে ভবিষ্যতে কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে।

নেতানিয়াহু ওই চুক্তিতে সই করেন গত বৃহস্পতিবার, মালে আদুমিম বসতি এলাকায় একটি অনুষ্ঠানে। এলাকাটি জেরুজালেমের পূর্বে অবস্থিত। অনুষ্ঠানে দম্ভ প্রকাশ করে নেতানিয়াহু বলেন, ‘কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র থাকবে না—এই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে যাচ্ছি আমরা। এই জায়গা আমাদের।’

ইসরায়েলের নতুন ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী, পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের জন্য নতুন ৩ হাজার ৪০০টি বাড়ি নির্মাণ করা হবে। এর ফলে পূর্ব জেরুজালেম থেকে পশ্চিম তীরের বেশির ভাগ অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। ফিলিস্তিনিদের কাছে পূর্ব জেরুজালেমের বড় গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে এই এলাকা চান তাঁরা।

১৯৬৭ সাল থেকে পশ্চিম তীরে বসতি গড়ছে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক আইনে এই বসতিগুলোকে অবৈধ বিবেচনা করা হয়। বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের (পিএ) মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনেহ বলেন, এই অঞ্চলে শান্তির জন্য পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা গুরুত্বপূর্ণ। নেতানিয়াহুর নতুন পদক্ষেপের পর দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান ‘অনিবার্য’ হয়ে পড়েছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী পুরো এলাকাকে ‘নরকের’ দিকে ঠেলে দিচ্ছে উল্লেখ করে নাবিল আবু রুদেইনেহ বলেন, জাতিসংঘের ১৪৯টি সদস্যদেশ এরই মধ্যে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে। যেসব দেশ এখনো স্বীকৃতি দেয়নি, সেগুলোকে দ্রুত এমন পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ